বিয়ের অনুষ্ঠান করা কি জায়েজ?
### ইসলামিক দৃষ্টিকোণে বিয়ের অনুষ্ঠান
ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র সম্পর্ক, যা সামাজিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সংহতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের অনুষ্ঠানে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন।
#### ১. বিয়ের তাৎপর্য
বিয়ে ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে একটি না হলেও এটি মানব জীবনে অপরিহার্য একটি স্তম্ভ। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বিয়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন:
> "তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিবাহ সম্পন্ন করো..." (সূরা নূর, আয়াত ৩২)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিয়েকে দ্বীনের অর্ধেক হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এর মাধ্যমে মানুষ ফিতনা থেকে মুক্ত থাকতে পারে। বিয়ের মাধ্যমে পুরুষ ও নারী বৈধভাবে একে অপরের সঙ্গ লাভ করে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে।
#### ২. বিয়ের অনুষ্ঠান
ইসলামে বিয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোন অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলক নয়, তবে কিছু রীতিনীতি পালন করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠান সহজ ও সাদাসিধে হওয়া উচিত। ইসলামের সুন্নত অনুযায়ী, বিয়ের অনুষ্ঠানে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয় পালন করা যেতে পারে:
##### **ক. খুতবা**
বিয়ের সময় খুতবা পড়া একটি সুন্নত। খুতবায় কুরআনের আয়াত ও হাদিস থেকে উদ্ধৃতি দেয়া হয় এবং বর-কনের দাম্পত্য জীবনের জন্য দোয়া করা হয়।
##### **খ. ওয়ালিমা**
ওয়ালিমা বা বিবাহোত্তর ভোজ একটি সুন্নত। এটি বিয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করার এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে মিলিত হওয়ার একটি মাধ্যম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিয়ের পরে ওয়ালিমা করার তাগিদ দিয়েছেন।
##### **গ. মেহমানদারি**
বিয়ের অনুষ্ঠানে মেহমানদের আপ্যায়ন করা ইসলামের সুন্নত। অতিথিদের আপ্যায়ন করার জন্য সাধ্যমত ভালো খাবার পরিবেশন করা যেতে পারে।
#### ৩. অনুষ্ঠান পরিকল্পনা
বিয়ের অনুষ্ঠান সহজ ও খরচ কম হওয়া উচিত। অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে চলা উচিত, যা অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ইসলাম অমিতব্যয়িতা এবং অপচয়কে নিরুৎসাহিত করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন:
> "নিঃসন্দেহে অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।" (সূরা ইসরাঈল, আয়াত ২৭)
বিয়ের অনুষ্ঠানে নিম্নলিখিত কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে
হবে:
##### **ক. পুরুষ ও নারীর পৃথক ব্যবস্থা**
ইসলামে নারী ও পুরুষের মধ্যে পর্দা পালনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে পুরুষ ও নারীর বসার ব্যবস্থা পৃথক হওয়া উচিত।
##### **খ. ইসলামী আদর্শ মেনে চলা**
অনুষ্ঠানের সময় ইসলামী আচার-আচরণ মেনে চলা উচিত। অশালীন পোশাক পরিধান, গান-বাজনা, এবং অপসংস্কৃতি থেকে বিরত থাকা উচিত।
##### **গ. ইবাদত ও দোয়া**
বিয়ের অনুষ্ঠানে ইবাদত ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা উচিত। দাম্পত্য জীবনের সুখ ও শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত।
#### ৪. অনিবার্যতা
ইসলামে বিয়ের অনুষ্ঠান করার অনুমতি আছে, তবে তা আবশ্যক নয়। মূল উদ্দেশ্য হলো বর-কনের সম্মিলন এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়। তবে অনুষ্ঠানকে সহজ ও সাদাসিধে রাখা উচিত।
### উপসংহার
ইসলামে বিয়ের অনুষ্ঠান জায়েজ, তবে তা সহজ ও সাদাসিধে হওয়া উচিত। অপ্রয়োজনীয় খরচ ও অপচয় এড়িয়ে চলা উচিত। ইসলামী আদর্শ ও সুন্নত মেনে চলা উচিত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দোয়া ও ইবাদত করা উচিত। বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং মানুষ ফিতনা থেকে মুক্ত থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন